★সার্ধশতবর্ষের আলোয় হারাতে বসা মেদিনীপুর ক্যানালের ইতিহাস★
সময়টা আজ কাল বা পরশুর নয় বরং বলা ভালো বেশ কয়েকযুগ আগের যখন বৃটিশ শাসন ও শোষণের বিস্তার সর্বত্র, অথচ ঠিক এই সময় দাঁড়িয়ে কোম্পানির জনৈক কালেক্টর এইচ. ভি. বেইলি সাহেব প্রথম ভাবলেন গ্রামবাংলার প্রান্তিক চাষীদের কথা। যদিও এই ভাবনার মধ্যে যে শুধুই চাষীদের স্বার্থই রক্ষার জন্য এটা বললে অর্ধসত্য বলা হয়। আসলে কোম্পানির খাজনায় ঘাটতির কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে সাহেব বুঝেছিলেন আসলে চাষীদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক দর না পাওয়া, আর সেটার মূল কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পরিকল্পিত সেচের অভাব।
১৮৪৯ সালে তদানীন্তন জেলার কালেক্টর বাহাদুর টোরেন সাহেবও জানাচ্ছেন যে, সে সময় জেলার উৎপন্ন ফসলের দাম এমন স্তরে নেমেছিল দিকে ছিল যে, কেদার ও তার পাশাপাশি পরগণার প্রজারা উৎপন্ন ফসল বেচে খাজনা দিতে প্রায় অসমর্থই হয়ে পড়ে। হিজলীতে সে সময় ধানের দাম ছিল টাকায় ৪ মণ ২৪ সের। সুতরাং মালপত্র একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার উপায় যদি সহজ হয়, তাহলে এই সমস্যার অনেক সমাধান হতে পারে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা করবেই বা কে আর বাস্তবায়নই বা করবে কে?
এমনই একসময় ১৮৫২ সাল নাগাদ জেলার কালেক্টরের দায়িত্বে এলেন বেইলীসাহেৰ। রাজা সুখময়-র আর্থিক আনুকুল্যে উড়িষ্যা ট্র্যাঙ্ক রোড সংস্কার হলেও সে সময়ের জেলার কালেক্টর বাহাদুর এইচ. ভি. বেইলী সাহেব যানবাহন গমনাগমনের বিষয়ে সে ভাবে সুপ্রসন্ন হতে পারছিলেন না। তার কারণ অবশ্য একটাই যানচলাচল সুগম না হলে প্রান্তিক চাষীরা তাদের উৎপাদিত ফসল অন্যত্র পাঠাবেন কি করে! আর তা যদি না পারে তাহলে ওই অঞ্চলে বিক্রিত ফসলের যথাযথ দাম তারা পাচ্ছিলেন না। তাতে অবিশ্য ক্ষতি ইস্ট ইন্ডিয়া কোং-রই। কারণ প্রজাদের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলে খাজনা তারা দেবেন কোথা থেকে! রাস্তা যদিও আছে কিন্তু দূরের বাজারে নিয়ে যেতে গেলে এত নদী খাল পেরিয়ে যেতে হয় যে তার খরচ হিসেব করলে তা আসলের দামকেও ছাড়িয়ে যায় তাই সে ভাবনা অবান্তর ছাড়া অন্য কিছুই নয়। তাই এই সমস্যা স্থায়ী সমাধানের জন্য বোর্ড অফ রেভেনিউকে প্রস্তাব দিলেন যে উলুবেড়িয়া থেকে পাঁশকুড়া পর্যন্ত এবং পাঁশকুড়া থেকে তমলুক ও মেদিনীপুর পর্যন্ত একটি খাল কেটে একটি জলপথ নির্মাণ করা হলে সরকারসহ সাধারণ প্রজা ও বানিজ্যের সুবিধার্থে যান চলাচলের একটি সুগম জলপথ তৈরি করতে পারলেই এই অঞ্চলের উৎপন্ন ফসল তার সসঠিক বাজার পাবে এবং পৌঁছাবে বড় বড় সব আড়তগুলোতে। অনেক ভাবনা চিন্তার পর বোর্ড অফ রেভেনিউ নিমরাজী হয়, তাদের একটিমাত্র আপত্তি এতবড় প্রোজেক্ট আর বেইলী সাহেবের মাঝে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়। তাদের বক্তব্য হল- 'নদীর জলে যে পলি পড়ে তাতে খাল সহজেই মজে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, আর এত ব্যয়ের পর আবার বছর বছর খাল সংস্কার অনেকটা গৃহস্থের হাতি কেনার মত অবস্থা হবে।' তারও সুরাহা বের করে ফেললেন বেইলী সাহেব। তাঁর পর্যবেক্ষণ ও সমাধানের উপায় বের করে ফেললেন। জানালেন- নদী ও খালের সংযোগ স্থলে একটি স্লুইশ গেট বসালেই তো বার্ষিক সংস্কারের বিপুল অর্থ বরাদ্দ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। সমস্যার সমাধান হল।
কালেক্টর সাহেব উলুবেড়িয়া থেকে পাঁশকুড়া পর্যন্ত খাল খননের প্রস্তাব পাশ করলেন, এবং সার্ভে করে জানা গ্যালো যে ওডিশা ট্রাঙ্ক রোড সংস্কারের সময়ই পাশের জমির মাটি তুলে রাস্তা উঁচু করার ফলে উলুবেড়িয়া থেকে কোলাঘাট পর্যন্ত সমান্তরাল ভাবে একটি খালের কাঠামো প্রায় বর্তমানই ছিল। ৪ঠা জুলাই, ১৮২৯ তারিখের 'বাংলা সমাচারপত্রে' যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে যে জল- পথটির প্রসঙ্গ আছে, তা ওই ট্রাঙ্করোড বরাবর সৃষ্ট খালটি ছাড়া অন্য কিছুই নয়, তাতে লেখা হয়েছিল,
“ ... শ্রীল শ্রীযুত কোম্পানি বাহাদুর উলুবেড়ে হইতে মহেশডাঙ্গা পর্যন্ত এক খাল খনন করিয়াছেন প্রায় বৎসরাবধি নৌকাদি তাহাতে গমনাগমন করিতেছে সংপ্রতি রাজকৰ্ম্ম সম্পাদক কর্তৃক এই নিয়ম স্থাপন হইয়াছে যে সেই খাল হইয়া নৌকাদি গমনাগমন করিলে নৌকাতে দাঁড় থাকিবেক প্রত্যেক দণ্ডে দুই আনা পরিমাণে কর লইবেন এই কর্মনির্বাহ জন্য তথায় কএকজন আমলা নিযুক্ত হইয়াছে এবং পূর্বোক্ত নিয়মে কর গ্রহণ করিতেছে।"
যাই হোক, বেইলী সাহেব সম্ভবতঃ এই খালের উদাহরণ থেকেই জলপথ নির্মাণের যৌক্তিকতা সম্পর্কে চিন্তা করেছিলেন কিনা এ নিয়েও যুক্তি তর্ক এমনকি গবেষণাও হতে পারে।
এই পর্যন্ত বেশ সাবলীল ভাবেই কাজ এগোলে আচমকা সব গোল বাধলো ১৮৫২ সালে। এই বছরই জেলা থেকে বেইলী সাহেবকে অনত্র বদলী করা হল। ব্যাস জলপথ পরিকল্পনা চলে গ্যালো নদীর বিশবাঁও জলে। যখন একটু একটু করে সব আশা মরে যাচ্ছিল তখনই ১৮৬০ সাল নাগাদ প্রায় আচমকাই বৃটিশ সরকার উলুবেড়িয়া থেকে মেদিনীপুর পর্যন্ত একটি জলপথ নির্মাণ ও তার সাথে তার রক্ষণাবেক্ষন ও পরিচালনার ইজারা দেওয়া হয় ‘ইস্ট ইণ্ডিয়া ইরিগেশন অ্যাণ্ড ক্যানাল কোম্পানি' নামে এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে। সরকারে যথোপযুক্ত রাজস্ব আদায় মোতাবেক জলপথে নৌকো চলাচল বাবদ টোল আর জলসেচের জন্য জলকর আদায় মারফৎ ব্যবসা চালানোই এই কোম্পানির উদ্দেশ্য। এ জলপথের নাম দেওয়া হল, মেদিনীপুর টাইড্যাল ক্যানেল, যা চলতি কথায় রূপান্তরিত হল মেদিনীপুর ক্যানেল বা খাল নামে। ১৮৬০-৬২ সালে পরিকল্পনা মাফিক উলুবেড়িয়ার হুগলী-ভাগীরথীর সঙ্গে যোগ করে খাল কাটার কাজ শুরু হল, যা এসে শেষ হল দামোদরের তীরে প্রসাদপুরে। তারপর জাবার কুলতেপাড়ার কাছে দামোদর পেরিয়ে প্রসারিত হল রূপনারায়ণের তীরে কাটাপুকুরে। রূপনারায়ণ নদের ওপারে মেদিনীপুরের দেনান থেকে শুরু হয়ে খালের যোগ হল পাঁশকুড়ায় কাসাই নদীতে। সেখান থেকে সোজা পশ্চিমে মেদিনীপুর শহরের কাছে মোহনপুরে কাসাইয়ে পড়ে শেষ হল । ১৬পূর্ণ৩/৪ মাইল বিস্তৃত ছোটখাটো শাখা প্রশাখা নিয়ে এ খালের অবশেষে দৈর্ঘ্য দাঁড়ালো মোট ৬৯পূর্ণ৩/৪ মাইল । তার মধ্যে দেনান থেকে পাঁশকুড়ার দৈর্ঘ্য ১২ মাইল এবং পাঁশকুড়া থেকে মেদিনীপুরের দৈর্ঘ্য দাঁড়ালো ২৫ মাইল। প্রত্যেকটি নদীর সংযোগস্থলে বসানো হল একটি করে উপযুক্ত স্লুইস গেট। পাঁশকুড়া ও মোহনপুরের কাছে কাসাইয়ের সংযোগ স্থলে বসানো হল আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে অ্যানিকেটটি। যার প্রমাণ আজও উজ্জ্বল।
খাল খননের কাজে শুধু বিলেত থেকে এ বিষয়ের দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারদের যেমন আনা হল তেমনই আনা হল অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম। এমন দুজন ইঞ্জিনিয়ারের নাম যে আজও অক্ষয় হয়ে আছে লোককবিদের গানটিই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ--
''কাসাই নদী বাধলো ইংরেজ বাহাদুরে
পামার কিমার দুজন এসে রাখল খ্যাতি সংসারে ।।"
এই দুদীর্ঘ কাজ সমাধা করতে এই ক্যানাল কোম্পানির কার্যরত এক তরুণ ইঞ্জিনিয়ার শেষপর্যন্ত তার দেশেও ফিরতে পারেননি, এদেশেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়, তেমনই সাক্ষ্যেরর সন্ধান মিলবে। আজও হাওড়া জেলার কাটাপুকুরের ব্লুইস গেটের কাছে এক সমাধি ফলকে। কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করা এক সমাধির উপর লেখা--
"1864
SAC
IS
CD
on 14th. October, 1864 Aged 33 years.
To the Lord our God belong mercies and forgiveness though rebelle against him. Erected by his surviving
Sister and brothers."
যখন মানুষ আশায় বুক বাঁধছিলেন সেই সময় দেখা দিল আবার এক বিপত্তি। খাল খনন পরিকল্পনাটির পূর্ণ রূপ দিতে কোম্পানিটির আর্থিক দৈন্যতা দেখা দিল। ফলে আর তাদের সাধ্যে কুলালো না। অবশেষে কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়ে পড়লে একরকম বাধ্য হয়েই সরকার এই জলপথ নির্মিতি- কোম্পানির কাছ থেকে কিনেই নিলেন এবং তৎকালীন সময়ে আরও প্রায় এককোটি টাকা বিনিয়োগ করে এটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দ্যান ।
অবশেষে এই জলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হল ১৮৭১ খ্রীষ্টাব্দে এবং নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তা উদ্বোধন করে ১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে নৌবহর চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হল সাধারণ যাত্রীদের জন্য।রমরমিয়ে কোম্পানি-তথা-সরকারের ব্যবসা শুরু হল। প্রতি নৌকো পিছু টোল আদায়ের মাধ্যমে। আপ-র টিকিট করা হল যথাক্রমে সাদা আর ডাউনেরর টিকিটটি করা হল লাল রঙের। বোঝাই নৌকো আর খালি নৌকোর ভাড়াও নির্ধারিত হল আলাদা আলাদা। চাহিদা বাড়লে প্রতি অর্থনীতিতেই যা হয় এই খালও তার ব্যতিক্রম হল না। নৌকোর মাঝি মাল্লাদের কাছে শুধু টোলই আদায় হত না, তাদের কাছ থেকে টোল কালেক্টর বাবুরা জোর করে ‘তহুরী' নামক উৎকোচ আদায় করতে পিছ পা হল না। তাদেরও এই ‘তহুরী’ নামক উপরি আদায় না দিয়ে কোন উপায়ও ছিল না কারণ জলপথে কোলকাতা থেকে ভায়া গেঁওখালি ঘুরে যাতায়াতের পথ কয়েকগুণ যেমন বাড়ত, সময় ও অর্থব্যয়ও হত অস্বাভাবিক। এই খাল পথটি খুলে যাওয়ায় বহু কৃচ্ছ্রসাধন করে এখন আর কোলাঘাট আসতে হয় না, দ্রুত ও অতি সহজেই এখানে পৌঁছে ঘাটাল বা মেদিনীপুরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। তা সে ব্যবসায়িক হোক বা সামাজিক। তাই 'টোল' করের উপর তহুরি নামের এই অতিরিক্ত খরচ প্রায় সকলেরই গা সওয়া হয়ে গেছল। ফলে টোল আদায়ের ব্যবসাও হয়ে উঠল জমজমাট। অন্যদিকে চলাচলের সুবিধে হওয়ায়, বিশেষ করে কলকাতার সঙ্গে জলপথে যোগাযোগের জন্যে বহু বর্ধিষ্ণু পরিবার উঠে এসে বসতি স্থাপন করলেন খালের কাছাকাছি বাস্তুতে। জায়গায় জায়গায় খাল পারাপারের জন্যে কোম্পানি দুদিকে দড়ি বাঁধা এক ধরনের সমতল চৌকো মাপের 'বোট'ও বসিয়ে দিল।
তবে মেদিনীপুর ক্যানেলটিকে চলাচলের যোগ্য রাখার জন্যে সরকারের চেষ্টার কমতি ছিল না। মাঝে মাঝে নৌকো চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছে পলি সরানোর জন্যে। ফোর্ট উইলিয়াম থেকে জারী করা ১৪ই ফেব্রুয়ারী, ১৮৭৯ তারিখের এক নোটিশে বেঙ্গল ইরিগেশন বোর্ডের অ্যাসিস্টান্ট চীফ ইঞ্জিনিয়ার, ডি. বি. হর্ন জানাচ্ছেন, খালের পলি সরানোর জন্য ১৫ই মার্চ থেকে ৩১শে এপ্রিল পর্যন্ত এই দেড় মাস দেনান থেকে মেদিনীপুর পর্যন্ত খালে নৌকো চলাচল বন্ধ থাকবে ।
এতসব কিছুর পরেও বাধা হয়ে দাঁড়ালো প্রকৃতি। হাওড়ার দিকে কাটাপুকুরের কাছে রূপনারায়ণে বেশ কিছু জায়গায় স্থানে স্থানে চড়া পড়তে শুরু করে। কোলকাতার দিক থেকে আসা নৌকো সেই কারণে কমতে শুরু করে, ফলে টোল আদায়ে ঘাটতি দেখা যায়। এবং ক্রমেই তা লোকসানের রূপ নিতে শুরু করে। সরকার তবু শেষ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে জলপথটির সবটুকু নাব্যতা ধরে রাখার জন্যে কিন্তু চরা পড়ার সাথে সাথে বাধ সাধল আরও একটি বিপদ। আর সেই বিপদটি অন্যকিছু না, নতুন প্রযুক্তি। ১৯০০ সাল নাগাদ বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে কোম্পানি তাদের রেলপথ বসিয়ে সহজেই যাতায়াতের নতুন দিগন্ত খুলে গ্যালো। যখন রেলগাড়িতে যাওয়া যেতে পারে, তখন আর মানুষ জলপথের ভরসায় না থেকে রেলপথে অভ্যস্ত হতে শুরু করে। ফলে রেলপথে গাড়ি চলাচলের কারণে জলপথ ব্যবসা ধীরে ধীরে ভাটা পড়তে পড়তে এইভাবে একদিন কালের নিয়মে থেমে গ্যালো। শুধু পড়ে রইলো দীর্ঘ খালটির একটি ফসিল আর ভুলে যাওয়া ইতিহাস, বছরের একটা সময় অর্থাৎ বর্ষায় স্ফীত হয়, বাকি সময় খালটি প্রায় শুকনোই থাকে ।
কয়েক কোটি টাকার বিলগ্নি কিন্তু সরকার বাহাদুরকে থেমে যেতে যেতেও শেষ করে দিতে দিল না। তাই ১৯০০ সালের প্রথম দিকে রেলগাড়ি চলতে শুরু করার কারণে, এই সময় এই সুদীর্ঘ খালটিকে জলসেচের কাজে লাগাতে বদ্ধপরিকর হন বৃটিশ সরকার। মাদপুরের কাছ থেকে অসংখ্য খাল-নালা যোগ করে সেচের জল দেবার বন্দোবস্ত করলেন। ১৯০৩ সাল নাগাদ খড়্গপুর ও ডেবরা থানায় এইভাবে জলকর আদায়ের পাকাপোক্ত অফিসও বসেছিলো। শেষ পর্যন্ত মেদিনীপুর ক্যানেল থেকে সেচের জল সরবরাহ হয়ে ক্যানেলের নামটি মুছে যেতে যেতেও রয়ে গেল । এরপর বহু অংশ বেহাত হয়ে গেল, যেমন দেনান থেকে মেছেদা পর্যন্ত অংশটি সেচ দফতরের হিসেব অনুযায়ী কোলাঘাটের ৫২টি, পাঁশকুড়া ব্লকের ২৯টি, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ১২টি ও তমলুক ব্লকের ২টি মৌজা মিলিয়ে ৯৫টি মৌজা এই খালের দ্বারা সেচ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে।
১৯৭৫ সাল নাগাদ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার সময় থেকেই খাল মজতে শুরু করে। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য ছাই জল ফেলার ফলে খালের প্রায় ছয় কি.মি অংশ পুরোপুরি মজে গিয়েছে। বর্তমানে কোলাঘাট, পাঁশকুড়া এবং তমলুকের কয়েক হাজার চাষীর চাষের জলসেচ ও অতিবর্ষণের জল নিকাশির স্বার্থে ক্যানেলটিকে পূর্ণাঙ্গভাবে সংস্কার করে কাজে লাগানো যেতে পারে। কিন্তু হায় আমার দেশ এখানে ইতিহাসেরও ইতিহাস খুঁজতে খুঁজতে একদিন সবই হারিয়ে যায়। য্যামোন করে হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ এই দেড়'শ বছরের একটা জীবন্ত ইতিহাস। ভালো থেকো ইতিহাস...