আহাম্মকের গদ্য(চব্বিশ)

 আহাম্মকের গদ্য(চব্বিশ)



এক

একটা সাংসারিক চৌহদ্দি পেরোতে পেরোতে চৌকাঠে হোঁচট খায়নি এরূপ বান্দা একপিসও আছে বলে ঠিক মনে করতে পারছি না। আমার পুরোনো বন্ধুমহল গোটা হাঁতড়ালেও না। তবে তারা সব হেব্বি ঝানু মাল, কোনও শালা আজ অবধি ঝেড়ে কাশলো না, অথচ ভাব খানা এমন চৈতন্য মার্কা টানবে না... হুঁ হুঁহ বাওয়া অত্তটা সোজা নয়, নামকরা আড়তের পাঁকাল। সে যাকগে যাক... যে কথাটি বলার সেটি হল এই সংসার, হেব্বি ইন্টারেস্টিং মাইরি একটু হালকা করে ডিলটা সামলাতে হয়। এটি একটি মিনি কুরুক্ষেত্রের নামান্তর জানিবেন হে পাঠক। এর যে কোনও লড়াই ধর্ম আর অধর্মের। মানে ইয়ে, ওই আর কি! ধর্ম সাথে শুরুটা হয় ঠিকই কিন্তু শেষের দিকটা হালকা কেঁচে গিয়ে টুক্কুসস করে টার্ন নিয়ে ন্যায় মৃদু অধর্মের দিকে। মানে গভীর ভাবে নিলে অধর্ম নইলে আলুভাতে, বুঝলেন না মোহাই। এই তো সেদিন লক-ডাউনের সময়টায়। সক্কাল থেকে চোখে মুখে মেঘ, গতিক ভালো নয় ঠাওরে এঁটো বাসনের পুরো ঝুড়িটা কলতলায় নিয়ে এলুম। হঠাৎ সেই বিগত সত্ত্বাটা বেঁচে উঠেই লাফিয়ে উঠল। কানে কানে বলে উঠল --ভুলে গেছিস! "সুপিরিয়ররাই আদতে ক্রাইমকে নিয়ন্ত্রণ করে তার কোনও না কোনও অধস্তনের মাধ্যমে। আর সেই সুপিরিয়র তুই চাইলেই  যে কোনও মুহূর্তে হতে পারিস।"

     ব্যাস মস্তিস্কের আঁশটে ঘিলুটা আচানক কিলকিল করে উঠল। বিশ্বাস করুন মাইরি বলছি, কামড়ান-বাবার দিব্বি। শুধু হাত থেকে এঁটো বাসনের ঝুড়িটা ঝনননন করে সিমেন্টের মেঝেতে হালকা করে ফেলে দিয়েছিলুম মাত্র। কয়েক সেকেণ্ডেই তার উপর্যুপরি ফল টুক্কুসস করে হাতে চলে এলো। দেখলাম আমার বাঁ দিকের দোতলার ব্যালকনি থেকে খোকনদার বৌ আর ডান দিকের জানালা দিয়ে চৌধুরি বৌদি, সামনের দরজা খুলে মলয়ের বৌ বেরিয়ে এলো একরকম হন্তদন্ত হয়েই। এসেই কাণ্ড দেখে সামান্য হকচকিয়ে গ্যালো হয়তো।  আমি তখন ভাবছি প্রশ্নটা কে করবে? প্রশ্নটা করল মলয়ের বৌ-- দাদা আপনি বাসন মাজবেন নাকি!!

ঠোঁটটা যতটা স্ফিত করা যায় ততটাই করে বললাম-- "সংসার তো একজনের নয়, দুজনের ভাই, তাই তোমার দিদির কাজ সামান্য কমিয়ে রাখা আর কি!! 

    কেউ আর কোনও কথা বলল না চুপচাপ চলে গ্যালো যার যার ঘোসলায়। কয়েক মুহূর্তে বৌ এসে ঝুড়িতে বাসন গুছিয়ে নিয়ে সিঙ্কে রেখে এলো। বলল-- তুমি তোমার পড়ার ঘরে চলে যাও, চা দিচ্ছি...

  খুঁটিয়ে একবার দেখলাম মুখটা। নাহহ হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি নয় এ অসুখের একমাত্র ওষুধ সিমপ্যাথি, বেশ চকিতে কাজ করেছে সেটা। মেঘ সরে গ্যাছে থমথমে গুমোট ভাবটাও গায়েব। মৃদু মৃদু হাওয়া দিচ্ছে। দখিনা। গুনগুন করে গান ধরলাম--"সকলই তোমারই ইচ্ছা, ইচ্ছাময়ী তারা তুমি// তোমার কর্ম তুমি কর মা, লোকে বলে করি আমি"

   একটু আগে বৌ কফি মিশ্রিত লাল চা দিয়ে গ্যাছে,  সাথে দু দুটো লেড়ো বিস্কুটও। চা থেকে তখনও আলতো ভাপ উঠছে। তিনদিক থেকে তিনবাড়িতে তখন ধুম ক্যাকোফনি চালু। তার চৌধুরি বৌদির গলাটা বেশি স্পষ্ট। চৌধুরিদাকে ঝাঁঝিয়ে কর্ত্তালের মত গলায় বলছে--"পাশের বাড়ির দাদাকে দেখে শেখো,সংসার কি ভাবে করতে হয়, আর তুমি! খাচ্ছোদাচ্চো আর বৌ-র হাড় জ্বালাচ্ছো!! সারা জীবনটায় আমার হাড়ে হলুদ দিয়ে দিলে গা!...!"


      কানে কানে সেই আমি এসে বলে গ্যালো-- দেখছিস তো?  "সুপিরিয়ররাই আদতে ক্রাইমকে নিয়ন্ত্রণ করে তার কোনও না কোনও অধস্তনের মাধ্যমে। আর সেই সুপিরিয়র তুই চাইলেই হতে পারিস যে কোনও মুহূর্তে।"

       এই সংসার, হেব্বি ইন্টারেস্টিং মাইরি একটু হালকা করে ডিলটা সামলাতে হয়। এটি একটি মিনি কুরুক্ষেত্রের নামান্তর জানিবেন হে পাঠক। এর যে কোনও লড়াই ধর্ম আর অধর্মের...


ক্রমশ...

আগের পর্বটি পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন--

https://lekhajokha-ek-dasaker-goutam-mahato.blogspot.com/2023/01/ahammaker-goddyo24.html

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.