চুটিয়া নাগপুরের কবি জসিন্তা কেরকেটা-র কয়েকটি কবিতার বাংলা অনুবাদ

চুটিয়া নাগপুরের কবি জসিন্তা কেরকেটা-র কয়েকটি কবিতার বাংলা অনুবাদ



কবি পরিচিতিঃ 

জসিন্তা কেরকেটা আদিবাসী সংবেদনশীলতা ও উদ্বেগের নতুন প্রজন্মের কবি। তিনি ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূম জেলার খুদপোস গ্রামে একটি দরিদ্র আদিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। হাট-বাজারে তেঁতুল বিক্রি করে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাঝে তিনি নিষ্ঠার সাথে পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং প্রতিনিয়ত প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। তার মা জমি বন্ধক রেখে কলেজ পড়ার জন্য টাকা দেন।লেখাপড়ার খরচ জোগাতে তাঁকেও নানান কাজ জুটিয়ে নিতে হয়। সংগ্রামের এই দিনগুলিতেই তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন যেখানে তাঁর ব্যক্তিগত দুঃখকে সামগ্রিক দুঃখের বহিঃপ্রকাশ করতে এবং তাঁর সমাজের বক্তব্যকে জনসমক্ষে নিয়ে এসেছিলেন।


        তিনি বিশঙ্কর উপাধ্যায় স্মৃতি যুব কবিতা পুরস্কার, ঝাড়খন্ড আদিবাসী গণ ফোরাম, এআইপিপি থাইল্যান্ডের আদিবাসী ভয়েস অফ এশিয়ার স্বীকৃতি পুরস্কার, ছোট নাগপুর সাংস্কৃতিক সংঘের প্রেরণা সম্মান সহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। পাঞ্জাবি, উর্দু, গুজরাটি, মারাঠি, অসমীয়া, কন্নড়, তামিল, সাঁওতালি ইত্যাদি ভারতীয় ভাষায়ও তাঁর কবিতা অনূদিত হয়েছে।




তার সাথে আমার সম্পর্ক কি ছিল? 



সেই আম গাছ যেটা ঠিক এখানে, রাস্তার পাশে ছিল যেখান থেকে প্রতিদিন আমাকে বাস ধরতে হত।  যতক্ষণ না বাস পৌঁছায় সে আমাকে ক্রমাগত বিরক্ত করে যেত, প্রথমে আমার দিকে একটি আম ছুড়ে দিত আর আমি  সাথে সাথেই খুশি তাতে দাঁত বসাতাম।

 "এটা তো টক" রেগে গিয়ে বললেই সে হাসত আর বলত- তুমি বাসে ঘুমাতে থাকো না? তাই!  এটি ঘুম তাড়ানোর জন্য ছিল, ঠিক আছে এখন আমি মিষ্টি আমটা ফেলে দিচ্ছি, সত্যিই! আর ততক্ষণে বাস চলে আসত। 


     বাস ধরতে সেদিন রাস্তায় পৌছালাম যখন দেখি তিনি নিখোঁজ। বছরের পর বছর ধরে যে আমার জন্য অপেক্ষা করে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকত সেই আম গাছ কোথায় যেতে পারে? 

  পরের দিন পত্রিকায় পড়ি তার মৃত্যুর খবর। আমি সেদিন কেঁদেছিলাম য্যামোন কারুর আত্মীয় খুন হলে হয়। সেদিন সারারাত আমার ঘুম হয়নি, সে কেমন ভাবে কাটা হল ভাবতে ভাবতে। পরেরদিন সেখানে দৌড়ে গিয় ভেবেছিলাম ওর সুগন্ধ নিয়ে এসে আমার উঠোনে লাগিয়ে দেব। তারপর সেই সুগন্ধ বেড়ে-বর্তে উঠলে আমি এটার গন্ধ জড়িয়ে বাড়ি থেকে বের হব। আর যখন ফিরে আসব আমি দেখব সেই সুগন্ধ আমার অপেক্ষায় উঠানে দাঁড়িয়ে থাকতে।


কিন্তু আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে যখন ধুলোর ঘূর্ণি আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো দেখি, আমার আম গাছের গন্ধ যুদ্ধ করছিল ধুলোর ঘূর্ণিঝড়ের সাথে একেবারে উন্মত্তের মত. দৌড়ে থানায় গেলাম এই রিপোর্ট লেখাতে- "আমার বন্ধুকে খুন করা হয়েছে"

  থানা হাসতে লাগল অতপর লাঠি উঁচিয়ে বলল "প্রথমে তুমি বল তার সাথে তোমার সম্পর্ক কি ছিল?" আমি এখনও দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াই সেটা বলতে তার সাথে আমার সম্পর্ক কি ছিল? কিন্তু এখন সেখানে কেউ নেই সব শেষ এখন শুধু ধুলো উড়ছে দূর-দূরান্তে চওড়া সমতল রাস্তায়।




শিকড়ের জমি 



তাদের বৃক্ষ সহ্য হয় না 

কারণ তার শিকড় জমি চায়।




সভ্যতার মৃত্যুর সময়




অক্সিজেনের অভাবে অনেক নদী মারা গেছে কিন্তু কেউ মনোযোগ দেয়নি যে তাদের লাশ ভাসছে এখনও মৃত জলে নদীর মৃতদেহের উপর একজন মানুষের লাশ ফেলে দিয়ে কারো অপরাধ জলে মিশে যায় না তারা সব জলে ভাসমান যেমন একটি নদীর সাথে মানুষের লাশ ভাসছে এখনও মৃত জলে


 একদিন যখন সব নদী মারা যাবে অক্সিজেনের অভাবে

 তখন মরা নদীতে ভাসতে দেখব 'সভ্যতার লাশ'


 শুধু নদী জানে তাদের মৃত্যুর পরে আসে সভ্যতার মৃত্যু সময়।





মাতৃভাষার মৃত্যু




মায়ের মুখেই মাতৃভাষাকে বন্দী করে দেওয়া হয়েছে আর বাচ্চারা তার মুক্তির দাবি তুলতে তুলতে বড় হচ্ছে।

 মাতৃভাষা নিজেই মারা যায় নি তাকে হত্যা করা হয়েছে।

 কিন্তু, মা কখনই এটা জানতে পারেনি। 


রুটির স্বপ্ন দেখানো সম্ভাবনার সামনে তার সন্তানদের জন্য দাঁত চেপে ধরে থাকা মায়ের স্বপ্নের নিচে সেই মাতৃভাষাকে চাপা দেওয়া হয়। মা এখনও অনুভব করেন ওখানে একটি দূর্ঘটনা ছিল- "মাতৃভাষার মৃত্যু"





নদী পাহাড় আর বাজার




গ্রামে সে একটা দিন ছিল, ভরসার। তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে বাজার চলেছি তখন। শুকনো গাছের মধ্যে দিয়ে দেখছি একটি সরু পথ আমি তরুণ প্রজন্মকে বলেছি, দ্যাখো, এটা একসময় গ্রামের নদী ছিল। সামনে তাকালে মাটিতে একটা বড় ফাটল আমি বললাম, সব পাহাড় এতে মিশে গেছে। হঠাৎ সে আমাকে জড়িয়ে ধরল সামনেই ভয়ংকর কবরস্থান। আমি বললাম, দেখছো? একসময় এটি ছিল তোমাদের পূর্বপুরুষদের শস্যাগার। তরুণ প্রজন্ম দৌড়ে বাজারে এলো! কি নেবে? দোকানদার জিজ্ঞেস করতে লাগল। কাকু একটু বৃষ্টি, একটু ভেজা মাটি, একটি বোতল নদী, সেই টিনজাত পাহাড় অন্যদিকে দেয়ালে ঝুলন্ত প্রকৃতি দাও, আর এই বৃষ্টির এত দাম কেন? দোকানদার বলল: "এই আর্দ্রতা এখানকার না! অন্য গ্রহ থেকে এসেছে, মন্দা আছে, অনেক অর্ডার করা হয়েছে তাই।" শাড়ির কোঁচড় হাঁতড়াতেই বিস্ময়! দেখা গেল আঁচলের গিঁটে টাকার পরিবর্তে দুমড়ে মুচড়ে পড়ে আছে আমাদের পুরো অস্তিত্ব...




হে শহর




বাড়ি থেকে পালিয়ে খড়, 

কাদামাটি এবং খাপরার চাল

প্রায়ই আমায় জিজ্ঞেস করে- 

হে শহর! তুমি কি কখনো উৎখাত হও সভ্যতার বিকাশের নামে?


Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.