আহাম্মকের গদ্য(কুড়ি) "মায়ের হৃদয়কাকু"

 আহাম্মকের গদ্য(কুড়ি)



মায়ের হৃদয়কাকু


এটাকে ঠিক ঘটনা বলা যায় না, এমন কি এটা কোনও বৃত্তও নয়, বলা যেতে পারে এটা একটা সময়ের দুর্দান্ত সফরনামা। জার্নি টু জার্নাল।

    মায়ের হৃদয়কাকু। ভদ্রলোক কোনও এক লতায় পাতায় মায়ের কাকা। অসম্ভব মেধাবী হওয়ায় আমার দিদিমা তাঁকে নিয়ে আসে তাঁর কাছে। বাঁচাকুচা জমিদারী সামালাতো বুড়িই। মা-রা তখন ছোট। মা-রা বলতে মা মাসি মামারা।

 সেই সময় ক্লাস নাইন টেনে পড়া এই মায়ের হৃদয়কাকার আগমন। তারপর তাঁর আই. এ, বি. এ পাস করা, চাকরি পাওয়া এবং আল্টিমেট এখানেই থেকে যাওয়াটা ছিল একটি নিতান্ত পারম্পরিক সমাপতনের আখ্যান। এমন কি তাঁর বিয়ের পরও বাড়িতে বউ রেখেই তিনি থাকতেন মামাবাড়িতেই। এর অবিশ্যি একটা কারণ ছিল- তাঁর কর্মস্থল। যা এখান থেকে যাতায়াতের সুগমতায় আধারিত। তাছাড়া দিদিমার জমিদারীর কাজের ক্ষেত্রেও তাঁর পর্যাপ্ত দখল ও বহু দিক দিয়ে ঠেস দিয়ে যাওয়া মায়ের হৃদয়কাকু নিজেকে ক্রমেই অপরিহার্য করে তুলেছিল এই পরিবারের পাঁজরে। 

    তো যাই হোক, সেই সময়কার সব গল্প বললে  মায়ের এই হৃদয়কাকুর কথা ফুরোনো মুশকিল। রাশি রাশি জীবনের অভিজ্ঞতার ঝুলি উপুড় করলেই জোছনা রাতের ঝুনপুকির মত গল্পরা পিলপিল করে বেরিয়ে আসত। আমরাও বাধ্য বিহগের মত অবাক হয়ে শুনতাম আর কল্পনার জোড়কলম গাঁথতে গাঁথতে মায়ের হৃদয়কাকু হৃদয়ের দাদু হয়ে উঠত। তাঁর সব গল্পের কথা বললে এই লেখাটির অনেক পর্ব হয়ে যাবে তাই সে সবে না গিয়ে আমার ও এই মাস্টারদাদুর(মায়ের হৃদয়কাকু আমি এই নামেই ডাকতাম) কথা বলি। এই বুড়ো অনর্গল ইংরাজীতে বকরবকর করতে পছন্দ করতেন, ভাঙাচোরা ফ্রেঞ্চও জানতেন। সামান্য একটি প্রাথমিক ইসকুলের শিক্ষক আর তাঁর বিস্তার দুটো কিছুতেই মেলাতে পারিনা আজও। নিখুঁত জ্ঞান এবং তারচেয়েও অসাধারণ তার প্রায়োগিক ক্ষমতার দক্ষতা। সবকিছুর উদাহরণ তার শুরু হত নেগেটিভ বিশ্লেষন দিয়ে। মনে হত মানুষটি একটি দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছে। সেই রোগটি বড্ড অদ্ভুতুড়ে। আত্মদ্বন্দ্বমূলক রোগ। খুব ভালো মত অবজার্ভ না করলে মনে হতেই পারে- তাঁর চরিত্র আর কথন দুটো য্যানো দুদিকের বল প্রয়োগে ব্যস্ত, বিপরীতমুখী।

    একবার তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম-- আচ্ছা দাদু নতুন কোনও ভাষা যে আমি শিখেছি সেটা বুঝব কি করে??

  বলেছিল-- "যেদিন তুই সেই ভাষাতে ইয়ার্কি করতে আর স্বপ্ন দেখতে পারবি সেদিন জানবি তুই সেই ভাষাটা শিখে গেছিস।"

   কি অসম্ভব আত্মপ্রত্যয়! কি তাৎক্ষনিক উত্তরের গভীরতা!  ভাবলে শিহরণ জাগে। অবশ্য এই মানুষটির মৃত্যুটার জন্য তার এই আত্মপ্রত্যয়ই দায়ী।

   থাক সে কথা। জন্মসূত্রে দাদু সানঘাঁটির। এই গ্রামটি সম্পর্কে একটু বলে নেওয়া প্রয়োজন। চাকুলিয়া থেকে দক্ষিনের বনবহির রাস্তা ধরে পুরোনো এরোড্রাম পেরিয়ে একটা ছোট্ট ডুংরির বর্ষার জলে ক্ষয়ে ক্ষয়ে তৈরি হওয়া সরু সোঁতা বরাবর ৫-৬ কিমি ডুবকা বন ডিঙোলে সানঘাঁটি।

 কি ভাবছো?? চাকুলিয়া নামটা বড্ড শোনা শোনা ঠেকছে?? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছো, যে বাটি/বোতল-সাবান আমরা কাপড় কাচার কাজে ব্যবহার করে থাকি, এটা সেই চাকুলিয়াই।

 পরে বিহারের সিংভূম জেলার অংশ ছিল বর্তমানে তা ঝাড়খণ্ডের, যদিও জেলাটা একই রয়ে গেছে। যদিও দাদু বৃটিশ আমলের মানুষ। এরোড্রামটা সেই বৃটিশ আমলেই তৈরি হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বায়ুসেনা মহড়ার জন্য। সে সময় তার ভেতর যাওয়ার অধিকার বা হিম্মত কারুর তো ছিল না, এমনকি কাছে ঘেঁসাও ছিল কল্পনাতীত, অপরাধ। মাস্টারদাদু রাস্তা কমানোর জেদে তাদের অফিসারদের যুক্তি দিয়ে বলে কয়ে, গল্প করে সেই অধিকার আদায় করেছিল। কেউ কেউ বলে তাঁর অনর্গল ইংরেজী বলতে পারার দক্ষতা ও ভাঙাচোরা ফ্রেঞ্চই ছিল সেই সাফল্যের চাবিকাঠি। তবে আসলে যে সেটা কি কারণে সেটুকু জানা হয়ে ওঠেনি কোনদিন। তবে আমারও মনে হয় তাঁর ওই বিদেশি ভাষার প্রতি অমোঘ টানই হয়তো তার প্রধান কারণ হয়ে থাকবে। এরকম একটা পাণ্ডব-বর্জিত দেশে গিলে করা ধোপদুরস্ত ধুতি পাঞ্জাবি পরা মানুষের মুখে ফ্লুয়েন্ট ইংরেজিতে কথা ও ভাব প্রকাশের আনন্দেই হয়তো গলে গিয়ে থাকতে পারে ইংরেজ অফিসাররা।

        সে যাই হোক মোটামুটি দাদু বাড়ি যেতে ওই শর্ট রাস্তাটিই ব্যবহার করত। সমুদ্রের মত এরোড্রাম, যার শুরু আছে কিন্তু শেষ আছে এটা ভাবতেই বহু কল্পনার আশ্রয় নিতে হবে। গ্রীষ্মের দুপুরে পেরোতে পেরোতে আমার মনে হয়েছিল 'থর' এর চেয়ে ঢের আরামপ্রদ হবে হয়তো। চুন সুরকির বাঁধানো মেঝে তেতে তন্দুরের তাওয়া হয়ে যায় তার ওপর কোনও গাছগাছালির সামান্যতম ছায়া না থাকায় জায়গাটি পাক্কা তেপান্তরের মাঠের রূপ নিয়েছে। তবে এর একটা অদ্ভুত নৈঃশব্দ আছে। একা পেরোতে পেরোতে শিষ দ্যায় সে। মনে হয় কানে পৃথিবীর সব বাতাস একসাথে শিষ দিচ্ছে। মাঝে মাঝে কোথা থেকে কররর কটকটকটকট আওয়াজ হয়। কেউ য্যানো অজান্তেই অযাচিতের মত তোমায় অনুসরণ করছে মনে হবে।

    বুড়ো কখনও কখনও মাসে দু'মাসে বাড়ি ফিরত। কারণ একটাই শিক্ষকদের বেতনটাও ছিল এখানকার বর্ষার মত, বড্ড অনিয়মিত। আর তাঁর যাতায়াতের মাধ্যম ছিল প্যাডেল চালিত দ্বিচক্রযান। প্রায় ৬০ কিমি রাস্তার ভরসা ওই 'জগদ্দল'!

   অবাক হলে!! আমার দ্যাখা শেষ বয়সেও মানে তখন বুড়োর বয়স তখন প্রায় ৮৫, সাইকেলে করে ৪০কি.মি এসে পেনশন তুলতো, জাম্বনীতে। আর ঠিক এই সময়কালটাতেই তাঁর সাথে আমার সখ্যতা গড়ে। দাদু মাসের পেনশন তুলে দুটো দানাদার কিনে আমাদের বাড়ি এসে পৌঁছাতো ঠিক অপরাহ্নের প্রাককালে। রাস্তা থেকে চিৎকার করতো--

-- "বড়খুখু...  অ বড়খুখু... মার্ ন বিটি ঝলাটা ধর রে!"

   বলেই কাদামাটির চাঙড় খসা কাঁথে সাইকেলটা হেলিয়ে দিত। আমি একছুটে দাদুর কাছে প্রভু ভক্ত সারমেয়ের মত ঘেঁসে দাঁড়াতাম রেঁঙড়পাহাড়ির খড়ি পাহাড় প্রমাণ অব্যক্ত প্রত্যাশা নিয়ে। ব্যাঙের মত ক্ষুদ্র জীবও তো জানে বর্ষার মরশুম বুঝি এলো, আর আমি তো তবু মানুষের বাচ্চা। আরও বলা ভালো নোলা বড় একান্নবর্তী পরিবারের ছা।

        তবে দানাদারের মোহপর্ব চুকেবুকে গেলে মাথায় জন্ম নিত দাদুর নানান লাল-নীল-হলুদ ফিতের ফাঁসে বাঁধা অদ্ভুতড়ে গল্প। বিশেষতঃ ভুতের গল্প। বিকেলের চা আহার সেরে বাড়ির বড়দের কাছ থেকে চাষাবাদের কথা ধানধুনির বিক্রিবাটার হালহকিকত সেরে চাইনিজ কাট লম্বা পাঞ্জাবিটা শরীর থেকে টেনে খুলতে খুলতে আমার দিকে আড়চোখে একবার দেখে নিত। তিনি জানতেন আমার বক্তব্য কি কি... বলত-- "যাহ, খাতাটা নিয়ে আয়।" আমি রূদ্ধশ্বাসে গিয়ে ঝুপ করে অপটু হাতের টপনায় সেলাই করা মুগা সুতোর খাতাটা এনে ভঁথায় বসে পড়তাম। দাদু গোল কালির ছোপ লাগা শাদা পাঞ্জাবিটার পকেট থেকে বের করে দিত পাইলট কোম্পানির ঝর্ণা কলমটা। টিয়াপাখির ঠোঁটের মতন নিবটা পাতায় ছোঁয়ালেই য্যানো নৌকা হয়ে যেত, অক্ষরের পর অক্ষরের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ত ঝরণার মতই। দাদু বলত- "একে ইংরেজিতে বলে 'ফাউন্টেন পেন'। ফাউন্টেনের বাংলা হল ঝর্ণা, বুঝলি!" আমি বোদ্ধাদের মতন ঘাড় কেঁতিয়ে দিতাম। মিনিট পাঁচেকের জন্য দিত ওটা। বলত- "দে দে! হয়ে গ্যাছে, তলোয়ার অন্যের হাতে বেশিক্ষণ দিতে নেই।"

     আমি অনিচ্ছাকে গলায় চেপে কলমটা দাদুর দিকে বাড়িয়ে দিতাম। বলতাম-- "আর এবারের গল্প?" বলত-- "তাহলে মাকে আরেককাপ চা দিতে বলে আয়!!" আমিও একছুট্টে ফাঁকা আইনগা পেরিয়ে রান্না ঘরে মাকে চায়ের ফরমায়েস দিয়ে আসতাম। এমনই চলত আমাদের লেনদেন। এমনই ছিল ঝর্ণা কলমের মালিক। কখনও সখনও ডুংরি ঢড়া পেরিয়ে কচাপালের নিচে কয়েৎবেল বনের নিচের ডুলংএ নিয়ে যেত। এমনি বেড়াতে। তার ছাব্বিশ ইঞ্চির সাইকেলের রডে বসে থাকতে থাকতে মনে হত আমাদের ডানা বেরোচ্ছে। ঝিরঝিরে ঝাউপাতার মত তার পালক আর ঘাসের চেয়েও নরম। কসোই গাছে সাইকেলটা হেলিয়ে দুজনে খাঁড়ি ধরে নেমে যেতাম ডুলুং-এর দিকে। জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে থাকতে দাদু উদাস হত, মনে হত এই মানুষটিকে আমি চিনি না। একটা ভয় এসে ঘিরে ধরত আমার ডানার চারপাশ। দাদুকে কখনও গান গাইতে শুনিনি। তবে অদ্ভুত অদ্ভুত কবিতা পাঠ করত। বুঝতাম না তবে শুনতে হেব্বি লাগত, মনটা কেমন উদাস হয়ে যেত সেই সময়। দাদু বলত-- "চোখ বন্ধ করে জলে হাতের পাতাটা ছুঁয়ে থাক"

বলতাম-- "ক্যানো?"

বলত-- "ঘুমন্ত অনুভূতিদের জাগাতে হয়। রাখ।"

আমিও মন্ত্রমুগ্ধেরর মত রাখতাম। 

বলত- ক্যামোন মনে হচ্ছে? 

বলতাম-- ক্যামোন আর!! জলকে জলের মতই মনে হচ্ছে!!

--"ধুসসসস! তোর অনুভূতির ঘুম খুব গাঢ়। এটা প্র্যাকটিস করিস মাঝে মাঝেই। শুধু ডুলুং-র জল না, গাছ, পাতা, ধানতলা, ধুলো যা পাবি, নিঃসঙ্গ হয়ে এদের কাছে এসে, ছুঁয়ে অনুভব করিস।" 


বিশ্বাস করুন মাইরি বলছি কয়েক হাজারবার আজ অবধি চোখ বন্ধ করে ছুঁয়ে অনুভব করার চেষ্টা করেছি। ধুলোকে ধুলো, জলকে জলই মনে হয়েছে, তার বেশি এগোতে পারিনি। তবে একবার মাত্র দুধেল ধানগাছিগুলোতে হাত বুলোতে বুলোতে কয়েকসেকেণ্ডের জন্য অনুভব করেছিলাম কোনও পোয়াতি মায়ের শরীর। আর না।

       দাদুর সাথে সন্ধে পার করে ফিরতাম। হাতপা ধুতে ধুতে আবারও বলতাম- "এবারের গল্প?"

দাদু তার কোটা যথা সময়ে পুরণ করত।

             এরকমই একটি গল্প রইল পাঠকদের জন্য-- দাদু উবাচঃ



গোমুহা ভুতঃ





চুটিয়া নাগপুর অঞ্চলের পাড়া-গাঁয়ে এই ভুতটি হেব্বি পপুলার। সে নাকি মুহূর্মুহু তার রূপ বদলে ফেলতে পারে। তবে তার মূল রূপটি হল গোরুর। এমনই একটা বর্ষার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছি সাইকেলে।  তো জ্যোৎস্ন না থাকায় চারপাশটা বেশ থমথমে, গুমোট ভাবটাই বলে দিচ্ছিল বৃষ্টি যে কোনও মুহূর্তে নামল বলে! তাই তাড়াতাড়িই এরোড্রামটা পেরিয়ে সাইকেলে উঠে সবে আধা মাইল এসেছি, প্রথমে ঝিমঝিম করে শুরু হল তারপর ফোঁটার সাইজ যেমন বাড়তে লাগল তেমনই তার ঘনত্বও। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চুপচুপে ভিজে গেলাম। তাতে অবশ্য বিশেষ সমস্য ছিল না ওটা আমার অভ্যাসের মধ্যেই পড়ে কিন্তু কেলো করল জঙ্গলের শিরশিরে হাওয়াটা যা কিছুক্ষণের মধ্যেই হাড়ে গিয়ে ফুঁ মারতে শুরু করল, আমিও দ্রুত কেঁপে কেঁপে উঠছি তখন। শাল জঙ্গলে বৃষ্টি হলে যা হয়-বনের যত বহি সাইকেলের টায়ার ছাপিয়ে কুলকুল করে এগোতে লাগল। মাটিও আলগা ফলে ব্যালেন্স করা বেশ শক্ত এই বহি রাস্তায়। আমি ও সাইকেল পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে গায়ের দিকে এগোচ্ছিলাম, আঁধারটাও ঠাহর করা মুশকিল হচ্ছিল। বাঁক বন কিছুই বুঝতে পারছি না ঠিকঠাক। বৃষ্টিটা খানিক ধরেছে সবে, আন্দাজ করলাম গাঁ আসতে তখনও মাইল দেড়েক বাকি। খানিকটা এগিয়ে বুঝতে পারলাম কচড়াতল তো পেরোলাম না!! মানে আমি রাস্তা ভুল করে দু-বার ডানদিকে ঘুরে গেছি, বৃষ্টিতে বুঝতে পারিনি। জঙ্গলটা যেহেতু আমার চেনা তাই দুশ্চিন্তাটা খুববেশি আমল দিলাম না। কয়েক কদম এগিয়েছি হঠাৎ হাম্বাআআআ ডাকে গা টা বেশ শিউরেই উঠল। যতই বলি ভুতটুত মানি না, কিন্তু অন্ধকার আর একাকিত্ব মনকে দুর্বল করার জন্য যথেষ্ট। আর কয়েককদম এগোতেই সামনে দিয়ে একটা গোরু জাতীয় কিছু ক্রশ করে গ্যালো কিছু বুঝে ওঠার আগেই। বুঝলাম আমি গোমুহার খপ্পরে পড়েছি। গাই-ডহরের ডুবকার ও পাশ থেকে পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে থাকবে। আমিও মনে মনে স্থির করলাম রাস্তা থেকে নামছি না, সে যাই হোক। রাস্তা হল ধর্মের, সঠিক রাস্তায় থাকলে কোনও খারাপই তোকে ছোঁবে না। মনে দু চারবার আইনস্টাইন থিওরি আওড়ে নিলাম। মনে শক্তি ফিরে আসছে একটু একটু করে। এর মধ্যে বারদুয়েক প্রাণীটি এপার ওপার করেছে। ঝুঁকে তাকালে হালকা ডিবরির টিমটিমে আলোর আভাস চোখে আসছে তবে সেটা সানঘাঁটির না গড়ংডিহির তা ঠাহর করা চাপের। সাইকেলটা বুদা কুলের ঝাড়ে হেলিয়ে ভেজা ধুতির কোচাটা খানিক নিংড়ে নিয়ে জুতটি করে একটা টেঁসে ছঁটটা গুঁজে নিয়ে(মালকাছা মেরে) সাইকেলটা তুলে এগোতে লাগলাম। নাহহ আর কিস্সুটি নেই, সংশয় ভয় সব সরে যাচ্ছিল পাঁচশো মিটার মত এসেছি হঠাৎ ডানদিকের ঝোপটা নড়ে উঠল। আমিও সাইকেলটা দড়াম করে ছেড়ে দিয়েই বেরিয়ে আসা প্রানীটাকে আঁকড়ে ধরলাম। ওমা দেখি গায়ে হাত পড়তেই প্রাণীটি স্থির হয়ে গ্যালো। দুজনই দুজনকে ছুঁয়ে হাঁফাচ্ছি। বুঝতে পারছি না কাজটা কি ঠিক হল না কি ভুল। সত্যিই কি অপদেবতার রোষের কবলে পড়লাম!! তাহলে কি আমার জন্য কিছু খারাপ তৌফা অপেক্ষা করছে! আদৌ কি আমি বেঁচে আছি!!


          দড়ির খাটিয়ায় আধশোওয়া হয়ে ছোটকা জিজ্ঞেস করল-- "তারপর!"

-- তারপর আবার কি দেখতেই তো পাচ্ছিস দিব্বি সশরীরে বর্তে আছি! 

-- না না! সেই প্রাণীটির কি হল??

-- "অহহ!! হুদকির কথা বলছিস?? সে তো এখন সকাল হলেই তিন পুআ দুধ দিছে"


ক্রমশঃ...


আগের পর্বটি পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-

https://lekhajokha-ek-dasaker-goutam-mahato.blogspot.com/2022/06/ahammaker-godyo19.html

Post a Comment

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.